দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিল হাউথিরা

বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে দুই মাকিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাউথি। মুক্তি পাওয়া এনজিও কর্মী সানদ্রা ললি ৩ বছর এবং ব্যবসায়ী গাইদাদা এক বছর ধরে হাউথিদের কারাগারে বন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ওমানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওমান স্টেট মিডিয়া এ তথ্য জানায়।

এদিন ওমান ২৫০ ইয়েমেনিকে বহন করা একটি বিমান দেশটির রাজধানী সানায় পাঠায়। ওই বিমানের ফিরতি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই নাগরিককে ওমানের সুলতান হাইতাম বিন তারিকের জিম্মায় মুক্তি দেয় হাউথিরা। আন্তজাতিক বাতা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, নাগরিকদের মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওমানে চিকিৎসা নেয়ার পর দেশে ফেরা ২৫০ ওমানীর সঙ্গে দুই হাউথি যোদ্ধাকেও ফেরত দেয় ওমান। মুলত এই দুই হাউথি যোদ্ধার বিনিময়ে দুই মার্কিন নাগরিক মুক্তি পেলেন বলে জানিয়েছে ওমানের স্টেট মিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবাট ওব্রেইন দুই নাগরিকের মুক্তির জন্য ওমানের সুলতান ও সৌদি বাদশা সালমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

২৭ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘের উদ্যোগে ইরান সমর্থিত হাউথি বিদ্রোহী ও সৌদি সমর্থিত সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনায় শুরু হয়। এতে ইয়েমেন সরকার এবং হাউথি বিদ্রোহীরা বন্দি বিনিময়ে একমত হয়েছে। এই যাত্রায় এক হাজার বন্দিবিনিময় হবে। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জন সৌদি সেনা রয়েছেন যারা হাউথিদের হাতে বন্দি রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে এ বন্দি বিনিময় হলো।

জাতিসংঘ সমর্থিত এ সরকারকে সৌদি আরব অস্ত্র ও সেনা সহায়তা দিয়ে আসছে। এর আগে ২০১৮ সালে ১৫ হাজার বন্দি বিনিময়ের একটি চুক্তিতে দুপক্ষই স্বাক্ষর করে। কিন্তু সেটি যেভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। প্রত্যাশার তুলনায় অনেক ধীর গতিতে চলছে সেই চুক্তির কার্যক্রম। সে সময়ও জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করেছিল চুক্তিটিতে।

রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি (আইসিআরসি) বলেছে, দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনার পর এ বিষয়ে একমত হওয়ে গেছে যে, দুপক্ষই এখন এক হাজার ৮১ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে।

হাউথিদের দ্বারা পরিচালিত ইয়েমেনের মাশিরাহ টেলিভিশন জানিয়েছে, হাউথিরা ১৫ জন সৌদি সেনাসহ ৪০০ বন্দিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে সৌদিসমর্থিত সরকার ৬৮১ জন হাউথি যোদ্ধাকে মুক্তি দেবে। ২০১৮ সালে শান্তি আলোচনার পর বন্দিবিনিময়ে এটি সবচেয়ে বড় চুক্তি।

মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘আমি মনে করি এই বন্দিদের মুক্তি দেয়ার পরপরই দুপক্ষের উচিত হবে পুনরায় সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্তি আলোচনায় অগ্রসর হতে।’

আইসিআরসি মুক্তি পাওয়ার পর সব বন্দির সাক্ষাৎকার নেবে। একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

গত বছর হাউথিরা ২৯০ সরকারি বন্দিকে মুক্তি দেয়, অপর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে ১২৮ হাউথি যোদ্ধাকে মুক্তি দেয়া হয়। এ বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডে সর্বশেষ আলোচনা শুরু হয়। যার লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৪২০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত হওয়া। তাদের মধ্যে ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আবদ-রাব্বু মনসুর হাদির ভাই নাসের মনসুর হাদিও রয়েছেন।

ইয়েমেনের সরকারের প্রতিনিধিদলের এক সদস্যের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, হাউথি বিদ্রোহীদের হাত থেকে জেনারেল নাসের মনসুর হাদির মুক্তি “পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে”।

২০১৫ সালে ইয়েমেন সরকারের দুর্নীতি ও নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। একসময় বিক্ষোভের নেতৃত্ব চলে আসে হাউথিদের হাতে। সে সময় হাউথিরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মনসুর হাদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তখন হাদি সৌদি আরবের হস্তক্ষেপ কামনা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এই সংঘাতে দেশটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত ও কয়েকলাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে দেশটির বেশির ভাগ সাধারণ নাগরিক। জাতিসংঘ এটিকে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছে।

এই যুদ্ধকে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়। এই ব্যায় বহুল যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে সৌদি আরব গত বছর উদ্যোগ গ্রহণ করলে শুরু হয় আলোচনার। ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হাউথিদের অবস্থান এবং যুদ্ধ শুরু হয় ২০১৫ সালে। তার পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যত অন্তত এক লাখ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন